পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, এ যেন প্রকৃতির এক মায়াময়ী রূপ সৌর্ন্দয। নদীর জলে নৌকার গলুইয়ের উপরবসে পাহাড় দেখার সৌর্ন্দযই আলাদা। ছোট এ নদীর জল নজরকাড়া।বাংলাদেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানেরয়েছে নদী এবং পাহাড়ের মিলন মেলা। তেমনি প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের এক লীলা ভুমি সিলেটের লালা খাল।সারিঘাটে নামলেইযে কারোর মনটা হালকা হয়ে আসবে। পাথরের ঢাল আর খালের স্বচ্ছ নীল জল দেখতে অপরুপ লাগে। লালা খালকে নদীবললে ভুল হবে। কেননা পিয়াইন নদীকে যদি নদী বলা যায় তবে লালা খালকেও নদী বলা বাঞ্চনীয়। কবির সেই নদী মতো- আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। তবে বৈশাখে লালা খালে হাঁটুজল থাকে না বলে জানালেন স্থানীয়রা।লালা খাল প্রাকৃতিক সৌর্ন্দযের এক অপরুপ লীলাভুমি। নদী আর পাহাড় মেলবন্ধন। নদীর টলটলে স্রোতস্বীনি জল আর
ভরা বর্ষায় জল যখন দু’কূল ছাপিয়ে উঠে তখন এই উর্বশীর খালের রুপই অন্যরকম। সারিঘাট থেকে প্রতি ঘন্টায়
নৌকা ছেড়ে যায়। স্থানীয়রা নৌকায় যাতায়াত করেন। খালের যেখানে শুরু সেখানেই রয়েছে বিশাল বিশাল চা
বাগান। এর পরই ভারতের সীমান্ত।খালের অপরুপ রুপকে উপভোগ করতে হলে নৌকায় ভ্রমণ করার কোনবিকল্প নেই। দল বেধে সেখানে গেলে সুবিধা
বেশী কারণ নৌকা ভাড়া বেশী নয়। জন প্রতি দশ টাকা, ভ্রমণে আনন্দও উপভোগ করা যায় এবং সকলে মিলে
হৈ-চৈ করে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়।
লালা খালকে কেন লালা খাল বলা হয় জানা যায়নি। নৌকার মাঝির কাছ থেকে এর কোন ব্যখ্যা উদ্ধার করা যায়নি।
নদীর পানি নীল রংয়ের। পানি স্থির নয়, সব সময় চলমান। কেননা পাহাড় থেকে সব সময় পানি গড়িয়ে পড়ছে।
নদীতে স্রোত থাকায় যাওয়ার পথে সময় বেশী লাগে আসার পথে কম।
নদীর পানি নীল কেন বোঝা মুশকিল। পানি ঘোলা হয়ে যে নীল হয়েছে তাও কিন্তু নয়। এরপরও এ নদীর পানি নীল।
তাই নদীর পানি নিয়ে যে মনে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। এ নদীর পানি নীল, কিন্তু নাম কেন লালা খাল হল এমন প্রশ্ন
অনেক পর্যটকের। হতে পার নীলা খাল।
মিশরের নীল নদ দেখা হয়নি। তবে এ খাল দেখে মনে হলো সিলেটের নীলনদ বা বাংলার নীল নদ।
লালা খালের দুই পাড়ে তেমন কোন বাড়ী ঘর নেই। কিন্তু আছে হরেক রকমের গাছ পালা আছে। যেন চারপাশে
সবুজের হাতছানি। মাঝে মাঝে কাশবনের ঝোপ চোখে পড়ে। তবে নদীতে অসংখ্য বাঁকের দেখা মেলে। প্রতিটি বাঁকই
দেখার মত সুন্দর। নদী থেকে দুরে পাহাড় দেখা যায়। দেখলে যতটা কাছে মনে হয় আসলে তত কাছে না।পাহাড়
গুলোকে দেখলে মনে হয় কেউ যেন নিজ হাতে থরে থরে একে পর একটি কওে সাজিয়ে রেখেছে। এখানে পাহাড়ের গায়ে
মেঘ জমা হয়। একটু কাছ থেকে দেখা যায় মেঘেরা দল বেধে পাহাড়ের গায়ে ঠেস লাগিয়ে থেমে থাকে। আবার কখনো
দুই পাহাড়ের মাঝ খান দিয়ে সবার অলক্ষ্যে হারিয়ে যায়। কখনো মেঘ বেশী জমা হলে এখানে বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়।
মাঝে মাঝে দু-
একটি ঘাটে একাধিক পল্লী বধুকে দেখা যায়। কাঁকে কলসীতে করে পানি নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বা গোসল করতে নদীতে নে
মে নীল জলে গা জোড়াচ্ছে। গ্রামীণ আবহ বিদ্যমান। নদীতে আসা গায়ের বধুদের দেখলে মনে হয় তারা বেশ দুর থেকে
এসেছে। রান্না এবং খাবারের পানি তারা এখাল থেকেই সংগ্রহ করে। দল বেধে আসে। আর একাধিক পাত্রে পানি নিয়ে
আবার দল বেধে বাড়ী ফিরে।
ভ্রমণ বিলাসী পর্যটকদের জন্য এই স্থানটি একটি আর্কষণীয় স্পট হতে পারে। যদিও বর্তমানে এখান এ জাতীয় কোন
উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। লালা খাল এলাকায় পর্যটকদের থাকার কোন জায়গা নেই। আর সিলেট শহর থেকে বেশ
দূরে। সন্ধ্যার দিকে নদীতে কোন নৌকা থাকেনা, তাই ভ্রমণ বা ঘোরাঘুরি সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ করতে হয়। সবচেয়ে ভা
লো হয় নৌকা ভাড়া নিয়ে যাতায়াত করলে।
লালা খালের চারপাশে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তটা আরো অবিস্মরনীয়। উপরে আলোকিত আকাশ। ক্লান্ত সূর্য ঢলে পড়ছে
পশ্চিম আকাশে। চারপাশে গাছপালার মাঝে পাখির কিচিরমিচির। এসব দেখলে মনে হয় পাহাড় থেকে তির তির সন্ধ্যা
নেমে আসছে। ধীরে ধীরে গোধুলীকেও আঁধার ঢেকে দেয়। ক্রমশ চারপাশে নেমে আশে আঁধার। সন্ধ্যার আঁধার নেমে
আসে লালা খালের স্বচ্ছ নীল জলে।
লালা খালের সূর্য ডুবির দৃশ্য অপরূপ। নীল জলের ভেতর ডুবে যাচ্ছে লাল থেকে পরে সোনালী হয়ে যাওয়া সূর্য- এমন
দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। পাহাড় থেকে নেমে আসা এক সময় পর্যটকদেরও ঘিরে ফেলে। নৌকায় থাকলে মনে হয়
আস্ত নৌকাটাই গিলে ফেলেছে অন্ধকার। উপর স্বচ্ছ আকাশ, চারিদিকে মায়াবী এক আঁধার তার সাথে আছে পানির
কলকল শব্দ, সন্ধ্যার সময় লালা খালে বেশ ভালো লাগার মতো।
লালা খালে যেতে হলে, সিলেটের শিশু পার্কের সামনে থেকে টেম্পু, লেগুনা অথবা জাফলংয়ের বাসে যেতে হবে সারিঘাট
। সিলেট আর জাফলং মাঝামাঝি এ স্থানটির নাম সারিঘাট। ফেরার পথে এখান থেকে বাসে কিংবা টেম্পুতে আসতে পা
রবেন। রাত আটটা নাগাদ যানবাহন পাওয়া যাবে।
থাকতে হবে সিলেট শহরে এসে।
Subscribe to:
Post Comments
(
Atom
)
No comments:
Write your comment here...